
স্বাস্থ্য ডেস্ক:
শুরু হয়েছে রমজান মাস। রমজান মাসে দিনের বেশির ভাগ সময় না খেয়ে থাকতে হয়। তাই এ সময় ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা কিছুটা কষ্টকর বটে। কারণ পুরো মাসজুড়ে আলাদা একটি খাদ্যাভ্যাস মেনে চলতে হয়।
রমজান মাসে শারীরিক সুস্থতা বজায় রাখার জন্য প্রয়োজন সঠিক খাদ্য ও পুষ্টি। স্বাভাবিকভাবে ডায়াবেটিস রোগীরা নির্দিষ্ট সময় পরপর বারবার অল্প পরিমাণে খাবার খেয়ে থাকেন। কিন্তু রমজান মাসে দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকতে হয়। তাই শারীরিক সুস্থতায় পুষ্টিবিদ ও চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়া প্রয়োজন।
বাংলাদেশ ডায়াবেটিক সমিতির নিউট্রিশন অফিসার ফাতেমা তুজ জোহরা বলেন, ‘পুরো রমজান জুড়ে ডায়াবেটিস রোগীরা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন। কারণ দীর্ঘ সময় না খেয়ে থাকার কারণে বেশিরভাগ রোগীর রক্তে গ্লুকোজ কমে গিয়ে হাইপোগ্লাইসেমিয়ার মত স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েন। আবার কোনো কোনো ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস রোগীদের গ্লুকোজ বেড়ে গিয়ে হাইপারগ্লাইসেমিয়াও দেখা দিতে পারে।’
ইফতারে খেজুর খেলে যত উপকার মেলেইফতারে খেজুর খেলে যত উপকার মেলে
এই পুষ্টিবিদের মতে, ডায়াবেটিস রোগীদের রমজান মাসের খাবার হতে হবে স্বাস্থ্যসম্মত, পরিমিত ও পুষ্টিকর। তাই রোজার সময় ডায়াবেটিস রোগীর খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনতে হবে। যেমন:
১. ডায়াবেটিক রোগীরা কোনোভাবেই সাহরীতে না খেয়ে রোজা রাখবেন না। তাদের সাহরীর খাবারে পর্যাপ্ত পরিমাণে আমিষ রাখা প্রয়োজন।
২. সাহরীতে দুধ, কলা দিয়ে ভাত খাওয়া ডায়াবেটিস রোগীর জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে। সে ক্ষেত্রে শুধু দুধ–ভাত অথবা শুধু দুধ–কলা খাওয়া যেতে পারে।
৩. রোজা চলাকালে ডায়াবেটিস রোগীর শরীর খারাপ লাগলেও ডায়াবেটিস মেপে দেখতে হবে। এ ছাড়া সাহরীর আগে, সাহরী খাওয়ার দুই ঘণ্টা পরে, মধ্য দুপুরে এবং ইফতারের দুই ঘণ্টা আগে মাঝে মাঝে ডায়াবেটিস মেপে নিতে হবে।
৪. ডায়াবেটিস মাপার পর যদি রক্তের গ্লুকোজ ৩.৯ মিলি মোল পার লিটার এর নিচে অথবা ১৬.৭ মিলি মোল পার লিটারের উপরে থাকে, তাহলে রোজা ভাঙতে হবে এবং চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে।
৫. ডায়াবেটিক রোগীদের পানিস্বল্পতা রোধের জন্য পর্যাপ্ত পরিমাণে পানি বা পানিজাতীয় খাবার ইফতারে গ্রহণ করতে হবে। কোমল পানীয় বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডিহাইড্রেশনের কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে। তাই সকল প্রকার কোমল পানীয় বাদ দেওয়াই ভালো।
৬. ডায়াবেটিক রোগীরা ইফতারে শরবত হিসাবে লেবু পানি, টকফলের শরবত, কম মিষ্টি ফলের শরবত, কাঁচা আম, বেলের শরবত, কচি ডাবের পানি পান করতে পারেন। তবে, শরবতে চিনি, গুড়, মধু, মিষ্টি যোগ করা যাবে না।
রমজান মাসে সেহরি–ইফতারে যা যা খেলে সুস্থ থাকবে শরীররমজান মাসে সেহরি–ইফতারে যা যা খেলে সুস্থ থাকবে শরীর
৭. এমন অনেকেই আছেন যারা, ইফতার বেশি খেয়ে পরে রাতের খাবার বাদ দেন। কিন্তু ডায়াবেটিস রোগীর জন্য যেমন ইফতারে অনেক বেশি পরিমাণে ইফতার খাওয়া স্বাস্থ্যের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ, তেমনি রাতের খাবার বাদ দেওয়াও তাদের জন্য ক্ষতিকর।
৮. রোজার মাসের জন্য সাধারণত সকালের ওষুধ বা ইনসুলিনের ডোজটুকু নিতে হবে ইফতারে। আর রাতের ডোজ নিতে হবে সাহরির সময়। তবে বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সাহরির সময়ের ওষুধ বা ইনসুলিনের ডোজ এডজাস্টমেন্ট প্রয়োজন হয়। তাই অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। কোন বেলায় ওষুধ বা ইনসুলিন নিতে ভুলে গেলে, পরবর্তী বেলায় ওভারডোজ করা যাবে না। এতে স্বাস্থ্য ঝুঁকি আরো বাড়তে পারে।